বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: বহুমুখী সঙ্কটে নিমজ্জিত দেশের পুঁজিবাজার। এর মধ্যে তারল্য সঙ্কট, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্কট, শেয়ার সঙ্কট, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি’র জনবল সঙ্কটের পাশাপাশি কোম্পানি আইনের ধারার পরির্বতন, এসইসি’র চেয়ারম্যান নিয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কও রয়ে গেছে।
এসব সঙ্কটের কারণে গত ১৫ কার্যদিবস পুঁজিবাজার নিম্নমুখী অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দিন দিন কমছে লেনদেনের পরিমাণ।
ফলে ঢাকা স্টক একচেঞ্জ (ডিএসই)’র বাজার মূলধন ২৪ হাজার ২৮৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা কমে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ক্রমাগত দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকায় বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে আবারও রাস্তায় নেমেছেন।
ধারাবাহিক পতনের কারণে গত সোমবার বিনিয়োগকারীরা ডিএসই’র সামনে অবস্থান ধর্মঘট ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন।
বাজার বিশ্লেষক ডিএসই’র সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা সালেউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তারল্য সঙ্কটের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক যে হারে পুঁজিবাজরের পিছু লেগেছে তাতে মনে হচ্ছে ব্যাংকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে পুঁজিবাজার কাজ করছে বলেই তাদের পিছু লাগতে হবে।’
এ ব্যাপারে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)‘র পদত্যাগী সদস্য ইয়াছিন আলী বলেন, ‘স্বাধীনভাবে এসইসিকে কাজ করতে না দেওয়া হলে আগামীতেও বাজারে বিপদ ঘটতে পারে।’
এর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘এসইসি’র উপর বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। এসইসিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।’
এ সময় তিনি টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসি’র সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সেইসঙ্গে বাজারের বর্তমান অবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও এসইসির মধ্যে সমন্বয়হীনতাকেও দায়ী করেন তিনি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে কয়েকটি ধাপে কাজ করতে হবে। প্রথমত, এসইসি’র সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। সেইসঙ্গে এসইসি’র আইনেরও পরির্বতন করতে হবে।’
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। এসইসি এককভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পাববে না। এজন্য প্রয়োজন নতুন নতুন কোম্পানির শেয়ার বাজারে প্রবেশ করা।
ব্যাংক এশিয়ার বিনিয়োগকারী আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, ‘এসইসি নিয়ম অনুযায়ী মার্জিন ঋণ অনুপাত হওয়ার কথা ১ঃ২ অর্থাৎ ১ লাখ টাকায় ২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা।’
তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘অনেক হাউজে আবার ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে কোনও কোনও হাউজে ১ঃ০.৫ অথবা ১ঃ০.৭ অর্থাৎ ১ লাখ টাকায় ৫০ হাজার অথবা ৭০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রীর জন্য এসইসির চেয়ারম্যান নির্বাচন এবং টাস্কফোর্স গঠনসহ পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা রক্ষায় তদন্ত কমিটির বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ আটকে রয়েছে।
অন্যদিকে, কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করলেও বাজার স্থিতিশীলতা রক্ষায় কোনও সিদ্ধান্ত বা মতামত দিচ্ছেন না।
চলতি মাসের শুরুর দিকে আইপিডিসির সাবেক এমডি চাকলাদার মুনসুর আলমকে এসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অতীতে বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িত থাকার কারণে তাকে এ পদে নেওয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার এসইসি’র দু’ সদস্য ইয়াসিন আলী এবং আনিসুজ্জামান পদত্যাগ করেছেন।
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে পদত্যাগ করেছিলেন মনসুর আলম।
মনসুর আলমের জায়গায় গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী যোগ দেন।
ফলে এখনও সদস্য পদে তিনটি পদ খালি রয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে শুরু হয়েছে ব্যাপক দরপতন এবং বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বর্তমানে এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ যে সরকারের হাতে নেই তা বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর ভাগ্য এখন কার হাতে? কে নিয়ন্ত্রণ করছে পুঁজিবাজার?
বিশ্লেষকরা এর জবাবে বলেন, অর্থমন্ত্রীর দেশে না থাকা এবং এসইসির লোকবল সঙ্কটের ফায়দা নিয়ে একাধিক চক্র বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের নাম এসেছে, তারাই বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠেছে বলেও মনে করছেন তারা।
বিশ্লেষকরা বলেন, এসব চক্র সরকারকে দেখাতে চায় যে তাদের বিচার করা হলে পুঁজিবাজারে আবারও ভয়াবহ ধস নেমে আসবে।
No comments:
Post a Comment