কখনো তিনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কখনো ভাইস চেয়ারম্যান, কখনো কোম্পানি সচিব আবার কখনো স্বত্বাধিকারী। কাগজে-কলমে তিনি পাঁচটি কোম্পানির কর্তাব্যক্তি। তিনি আবদুর রহিম, শেয়ারবাজারে একজন বিনিয়োগকারী। ঢাকার ১৫টি ব্রোকারেজ হাউসে নামে-বেনামে তাঁর ৮০টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের সন্ধান মিলেছে।
নিজ নামের বাইরে স্ত্রী বদরুন্নেসা, ভাই জহিরুল ইসলাম, শ্যালিকা সোনিয়া সুলতানাসহ বেশ কয়েকজন নিকটাত্মীয় ও কোম্পানির নামে এসব বিও হিসাব খোলা হলেও বেশির ভাগ হিসাবের সুবিধাভোগী তিনি নিজেই।
পুঁজিবাজারে কারসাজির মাধ্যমে কম সময়ে অধিক মুনাফা তুলে নিতে অভিনব এই পন্থা বেছে নেন আবদুর রহিম। নামে-বেনামে থাকা এসব বিও হিসাবের মাধ্যমে কারসাজি করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চার কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করে তুলে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকার মুনাফা। একের পর এক কারসাজিতে সফল হওয়ায় শেয়ারবাজারে সবাই এখন তাঁকে চেনে ‘রহিম বাদশা’ নামে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একটি অনুুসন্ধানী দল সম্প্রতি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে আবদুর রহিমের শেয়ার লেনদেনের কারসাজির তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। নিবিড়ভাবে আরও অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে এসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি আমার হাতে এসেছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নামে-বেনামে বিও: ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিও হিসাবগুলোর মধ্যে আবদুর রহিমের নিজের নামে ১৩টি, স্ত্রীর নামে ১১টি, যৌথ নামে চারটি হিসাব রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন পাঁচ প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে ৩৩টি বিও হিসাব। এর মধ্যে ইক্যুইটি ক্যাপিটাল (এমসিএস) লিমিটেডের নামে সর্বাধিক নয়টি, এম্পায়ার সিকিউরিটিজ হোল্ডিংয়ের নামে আটটি, নিউ ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স লিমিটেড এবং এআর কনসালটেশনের নামে সাতটি করে মোট ১৪টি ও ইক্যুইটি অ্যান্ড বন্ড ম্যানেজমেন্টের নামে দুটি বিও হিসাব রয়েছে। আবদুর রহিমকে এসব কোম্পানির কোনোটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোনোটির সচিব, কোনোটির ভাইস চেয়ারম্যান ও কোনোটির স্বত্বাধিকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাকি ১৯টি বিও হিসাবধারীর পরিচয়দানকারী ও মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে আবদুর রহিমের নাম রয়েছে।
তবে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচ কোম্পানির তিনটির কোনো অস্তিত্ব নেই।
চার কোম্পনির শেয়ার নিয়ে কারসাজি: নামে-বেনামে থাকা খোলা বিও হিসাবগুলো ব্যবহার করে আবদুর রহিম তালিকাভুক্ত অপেক্ষাকৃত কম মূলধনের কোম্পানি রহিম টেক্সটাইল, বঙ্গজ, মিথুন নিটিং ও রেনাটা লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর কারসাজির ঘটনা ঘটিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম মূলধন হওয়ায় এক দিনে স্বল্প পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করেই সহজে দামকে প্রভাবিত করা যায় বলে কারসাজির জন্য এসব কোম্পানি বেছে নিয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ২০১০ সালের পুরোটা সময় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আবদুর রহিম কারসাজির মাধ্যমে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবদুর রহিম ২০০৯ সালের ৮ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত সময়ে ১২টি বিও হিসাবে লেনদেনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে রহিম টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছেন। এ সময় বাজারে কোম্পানির মোট ছয় হাজার শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে আবদুর রহিমের বিও হিসাবগুলোতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৭৯০টি শেয়ার, যা ওই সময়ে লেনদেন হওয়া মোট শেয়ারের ৩০ শতাংশ।
ওই বছরের ৭ জুন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৬১৫ টাকা। আর ৮ জুন এক দিনেই প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ৯০ টাকা বা প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। ওই দিন (৮ জুন) লেনদেন হওয়া ৫৬০টি শেয়ারের মধ্যে ২০০টিই কেনেন রহিম। এতে ২১ জুন কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৫ টাকায়। এই সময়ের মধ্যেই রহিম শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেন।
আবদুর রহিম ২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট সময়ে একইভাবে কারসাজি করে বঙ্গজ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ান। এ সময় কোম্পানির এক লাখ ৪০ হাজার ৭৭৭টি শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৭৭৫টি শেয়ার লেনদেন করেন রহিম। এর ফলে ৭ এপ্রিল কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৯৯৯ টাকা ৭৫ পয়সা, ১২ এপ্রিল সেই দাম বেড়ে হয় সর্বোচ্চ এক হাজার ২০৯ টাকা ৭৫ পয়সা।
বাজার সূত্রে জানা যায়, আবদুর রহিম এ সময় অনেককে ক্ষুদেবার্তা দিয়ে জানান, বঙ্গজের প্রতিটি শেয়ারের দাম অতি শিগগিরই আড়াই হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। একপর্যায়ে সত্যি সত্যি শেয়ারটির দাম তার বেঁধে দেওয়া দামকেও ছাড়িয়ে যায়। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আবদুর রহিম ফের বঙ্গজ কোম্পানির শেয়ারের ধারাবাহিক (সিরিজ) লেনদেন করেন। ওই দিন লেনদেন হওয়া কোম্পানিটির ৮৬৫টি শেয়ারের মধ্যে ৬৭০টিই লেনদেন করেন তিনি, যা লেনদেন হওয়া মোট শেয়ারের ৭৭ শতাংশ। ওই দিন তিনটি বিও হিসাবে তিনি ৪৩০টি শেয়ার কেনেন। এতে শেয়ারের দাম বেড়ে গেলে অপর দুটি বিও হিসাব থেকে ২৪০টি শেয়ার বিক্রি করেন।
এরপর ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে মিথুন নিটিংয়ের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেন আবদুর রহিম। ৮ নভেম্বর তিনি ও তাঁর স্ত্রী বদরুন্নেসা মিলে বাজার থেকে এক দিনেই ২৩ হাজার ৪০০ শেয়ার কেনেন। ওই দিন বাজারে কোম্পানিটির মোট ৩৯ হাজার ৯৮০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ শেয়ার লেনদেন করেন এই দুজন। এরপর ১১ নভেম্বর কোম্পানিটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে। এর মধ্যে ছিল ২৫ শতাংশ স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ, শেয়ারের অভিহিত মূল্য ও মার্কেট লট পরিবর্তন এবং অনুমোদিত মূলধন বৃদ্ধি। এই ঘোষণায় কোম্পানিটির শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। নভেম্বরের শুরুতে যেখানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল এক হাজার টাকার কাছাকাছি, সেখানে ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই সেটির দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় আড়াই হাজার টাকায়। দাম বাড়ার এই সময় শেয়ার লেনদেন করে রহিম বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকায় মূল্য সংবেদনশীল অনেক তথ্য তিনি আগাম জেনে গিয়েছিলেন।
২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি সাত দিনেই রেনেটার শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই সময় বাজারে কোম্পানিটির দুই হাজার ৮২১টি শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে নয়টি বিও হিসাবের মাধ্যমে দুই হাজার ১০টি শেয়ার লেনদেন করেছেন রহিম ও তাঁর সহযোগীরা। এই সময়ের মধ্যে তিনি একাধিক দিনে একটি বিও হিসাবে সর্বনিম্ন দামে শেয়ার কিনেছেন আর ওই দিনই অন্য বিও হিসাব থেকে শেয়ার বিক্রি করেছেন। যার মাধ্যমে বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছেন।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১২ হাজার ৯৯৯ টাকা ৫০ পয়সা। ৩১ জানুয়ারি প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ২২৩ টাকা।
ডিএসইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এভাবে কারসাজির মাধ্যমে ধারাবাহিক ও যুগপৎ লেনদেনের ঘটনা ঘটিয়ে রহিম ও তাঁর সহযোগীরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯-আইনের ১৭ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। এ ব্যাপারে আবদুর রহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর সব মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-05-31/news/158583
নিজ নামের বাইরে স্ত্রী বদরুন্নেসা, ভাই জহিরুল ইসলাম, শ্যালিকা সোনিয়া সুলতানাসহ বেশ কয়েকজন নিকটাত্মীয় ও কোম্পানির নামে এসব বিও হিসাব খোলা হলেও বেশির ভাগ হিসাবের সুবিধাভোগী তিনি নিজেই।
পুঁজিবাজারে কারসাজির মাধ্যমে কম সময়ে অধিক মুনাফা তুলে নিতে অভিনব এই পন্থা বেছে নেন আবদুর রহিম। নামে-বেনামে থাকা এসব বিও হিসাবের মাধ্যমে কারসাজি করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চার কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করে তুলে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকার মুনাফা। একের পর এক কারসাজিতে সফল হওয়ায় শেয়ারবাজারে সবাই এখন তাঁকে চেনে ‘রহিম বাদশা’ নামে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একটি অনুুসন্ধানী দল সম্প্রতি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে আবদুর রহিমের শেয়ার লেনদেনের কারসাজির তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। নিবিড়ভাবে আরও অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে এসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি আমার হাতে এসেছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নামে-বেনামে বিও: ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিও হিসাবগুলোর মধ্যে আবদুর রহিমের নিজের নামে ১৩টি, স্ত্রীর নামে ১১টি, যৌথ নামে চারটি হিসাব রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন পাঁচ প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে ৩৩টি বিও হিসাব। এর মধ্যে ইক্যুইটি ক্যাপিটাল (এমসিএস) লিমিটেডের নামে সর্বাধিক নয়টি, এম্পায়ার সিকিউরিটিজ হোল্ডিংয়ের নামে আটটি, নিউ ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স লিমিটেড এবং এআর কনসালটেশনের নামে সাতটি করে মোট ১৪টি ও ইক্যুইটি অ্যান্ড বন্ড ম্যানেজমেন্টের নামে দুটি বিও হিসাব রয়েছে। আবদুর রহিমকে এসব কোম্পানির কোনোটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোনোটির সচিব, কোনোটির ভাইস চেয়ারম্যান ও কোনোটির স্বত্বাধিকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাকি ১৯টি বিও হিসাবধারীর পরিচয়দানকারী ও মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে আবদুর রহিমের নাম রয়েছে।
তবে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচ কোম্পানির তিনটির কোনো অস্তিত্ব নেই।
চার কোম্পনির শেয়ার নিয়ে কারসাজি: নামে-বেনামে থাকা খোলা বিও হিসাবগুলো ব্যবহার করে আবদুর রহিম তালিকাভুক্ত অপেক্ষাকৃত কম মূলধনের কোম্পানি রহিম টেক্সটাইল, বঙ্গজ, মিথুন নিটিং ও রেনাটা লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর কারসাজির ঘটনা ঘটিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম মূলধন হওয়ায় এক দিনে স্বল্প পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করেই সহজে দামকে প্রভাবিত করা যায় বলে কারসাজির জন্য এসব কোম্পানি বেছে নিয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ২০১০ সালের পুরোটা সময় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আবদুর রহিম কারসাজির মাধ্যমে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবদুর রহিম ২০০৯ সালের ৮ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত সময়ে ১২টি বিও হিসাবে লেনদেনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে রহিম টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছেন। এ সময় বাজারে কোম্পানির মোট ছয় হাজার শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে আবদুর রহিমের বিও হিসাবগুলোতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৭৯০টি শেয়ার, যা ওই সময়ে লেনদেন হওয়া মোট শেয়ারের ৩০ শতাংশ।
ওই বছরের ৭ জুন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৬১৫ টাকা। আর ৮ জুন এক দিনেই প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ৯০ টাকা বা প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। ওই দিন (৮ জুন) লেনদেন হওয়া ৫৬০টি শেয়ারের মধ্যে ২০০টিই কেনেন রহিম। এতে ২১ জুন কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৫ টাকায়। এই সময়ের মধ্যেই রহিম শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেন।
আবদুর রহিম ২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট সময়ে একইভাবে কারসাজি করে বঙ্গজ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ান। এ সময় কোম্পানির এক লাখ ৪০ হাজার ৭৭৭টি শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৭৭৫টি শেয়ার লেনদেন করেন রহিম। এর ফলে ৭ এপ্রিল কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৯৯৯ টাকা ৭৫ পয়সা, ১২ এপ্রিল সেই দাম বেড়ে হয় সর্বোচ্চ এক হাজার ২০৯ টাকা ৭৫ পয়সা।
বাজার সূত্রে জানা যায়, আবদুর রহিম এ সময় অনেককে ক্ষুদেবার্তা দিয়ে জানান, বঙ্গজের প্রতিটি শেয়ারের দাম অতি শিগগিরই আড়াই হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। একপর্যায়ে সত্যি সত্যি শেয়ারটির দাম তার বেঁধে দেওয়া দামকেও ছাড়িয়ে যায়। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আবদুর রহিম ফের বঙ্গজ কোম্পানির শেয়ারের ধারাবাহিক (সিরিজ) লেনদেন করেন। ওই দিন লেনদেন হওয়া কোম্পানিটির ৮৬৫টি শেয়ারের মধ্যে ৬৭০টিই লেনদেন করেন তিনি, যা লেনদেন হওয়া মোট শেয়ারের ৭৭ শতাংশ। ওই দিন তিনটি বিও হিসাবে তিনি ৪৩০টি শেয়ার কেনেন। এতে শেয়ারের দাম বেড়ে গেলে অপর দুটি বিও হিসাব থেকে ২৪০টি শেয়ার বিক্রি করেন।
এরপর ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে মিথুন নিটিংয়ের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেন আবদুর রহিম। ৮ নভেম্বর তিনি ও তাঁর স্ত্রী বদরুন্নেসা মিলে বাজার থেকে এক দিনেই ২৩ হাজার ৪০০ শেয়ার কেনেন। ওই দিন বাজারে কোম্পানিটির মোট ৩৯ হাজার ৯৮০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ শেয়ার লেনদেন করেন এই দুজন। এরপর ১১ নভেম্বর কোম্পানিটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে। এর মধ্যে ছিল ২৫ শতাংশ স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ, শেয়ারের অভিহিত মূল্য ও মার্কেট লট পরিবর্তন এবং অনুমোদিত মূলধন বৃদ্ধি। এই ঘোষণায় কোম্পানিটির শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। নভেম্বরের শুরুতে যেখানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল এক হাজার টাকার কাছাকাছি, সেখানে ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই সেটির দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় আড়াই হাজার টাকায়। দাম বাড়ার এই সময় শেয়ার লেনদেন করে রহিম বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকায় মূল্য সংবেদনশীল অনেক তথ্য তিনি আগাম জেনে গিয়েছিলেন।
২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি সাত দিনেই রেনেটার শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই সময় বাজারে কোম্পানিটির দুই হাজার ৮২১টি শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে নয়টি বিও হিসাবের মাধ্যমে দুই হাজার ১০টি শেয়ার লেনদেন করেছেন রহিম ও তাঁর সহযোগীরা। এই সময়ের মধ্যে তিনি একাধিক দিনে একটি বিও হিসাবে সর্বনিম্ন দামে শেয়ার কিনেছেন আর ওই দিনই অন্য বিও হিসাব থেকে শেয়ার বিক্রি করেছেন। যার মাধ্যমে বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছেন।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১২ হাজার ৯৯৯ টাকা ৫০ পয়সা। ৩১ জানুয়ারি প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ২২৩ টাকা।
ডিএসইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এভাবে কারসাজির মাধ্যমে ধারাবাহিক ও যুগপৎ লেনদেনের ঘটনা ঘটিয়ে রহিম ও তাঁর সহযোগীরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯-আইনের ১৭ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। এ ব্যাপারে আবদুর রহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর সব মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-05-31/news/158583
No comments:
Post a Comment